ত্বকের উজ্জ্বলতা বা লাবন্যতা বৃদ্দি করে যেসব খাবার
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা সবাই চাই যে অল্প বয়সে কপাল কুঁচকে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাওয়া, ডার্ক সার্কেল হয়ে যাওয়া, চেহারা খসখসে হয়ে যাওয়া, চেহারা থেকে নূর চলে যাওয়া এইটা কিন্তু আমরা চাইনা আমরা সবাই চাই আমাদের চেহারাটা থাকুক উজ্জ্বল, সুন্দর, নির্মল এবং চোখের চারপাশ কালো দাগ মুক্ত। এগুলো যদি আপনাকে পেতে হয় তাহলে কি গাধা গাধা ক্রিম কিনে মুখে লাগাবেন..!! না না এই কাজটা করতে যাবেন না। আর এটাই আমরা খুব বেশি বেশি করছি ফলে ফলাফল পাচ্ছি উল্টো।
একটা কথা বলি, মানুষের চেহারা উজ্জলতা কোন ক্রিম বাড়াতে পারেনা। এটা শুধু মাত্র খাদ্যাভ্যাসই বাড়াতে পারে। এইটা ১০০% সত্য কথা। এইটা আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। আর আপনি যদি ঠিক ঐ খাবারগুলো খেতে পারেন তবে চেহারার উজ্জ্বলতা বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।
যেমন শুরুতে একটা কথা বলি সকালের নাস্তায় তেলের পরিমাণটা কমিয়ে দিন। তেলের ব্যবহার যদি বেশি করেন যেমন অনেকেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নুডলস, পাস্তা, তেলে ভাজা পরোটা কিংবা তেলের বিভিন্ন ধরনের নাস্তা গ্রহণ করেন। এগুলো কিন্তু ত্বকের উজ্জলতা নষ্ট করে। আপনি চেষ্টা করবেন সকালে ভালো খাবার খেতে ভালো মানের প্রোটিন রয়েছে, ভালো মানের কার্প রয়েছে এবং লাল এটার রুটি এগুলো খাবেন। এগুলো ত্বকের জন্য বেশ ভালো হবে, আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করতে হবে। আর তেলের বদলি কিছুটা পরিমাণ ঘি বা বাটার অথবা কোকোনাট অয়েল যদি ব্যবহার করতে পারেন অর্থাৎ সয়াবিন তেলের পরিবর্তে যদি এগুলো ব্যাবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকে অসাধারণ উন্নতি দেখতে পাবেন। এক মাস থেকে দুই মাস টানা আপনি সামান্য পরিমাণ ঘি দিয়ে পরোটাটা ভেজে খান। মনে রাখবেন, ৩ টি পরোটায় ২ চামচের বেশি ঘি ব্যবহার করা যাবে না। আপনার চেহারার উজ্জ্বলতা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার খাবারের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
আপনার চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য আসলে কি করা উচিত?
দেখুন সর্বপ্রথম শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে হবে। ডিটক্স করার জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনি কোথায় পাবেন? সাধারণ কিছু খাবারের মধ্যে কিন্তু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। আমি ওষুধ সেবন করে সেই পরিমাণ পুষ্টি কিন্তু পাবেন না, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চাইলে শরীরটাকে ডিটক্স করে ফেলতে পারে। কি করে..!! সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যদি আপনি লেবু পানিটা খেয়ে নেন তাহলে শরীরটা ডিটক্সিফাই হয়ে যাবে। মনে রাখবেন, যদি আপনার গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহলে পুরো একটি লেবু খেয়ে ফেলতে যাবেন না অর্থাৎ আপনি সামান্য লেবু উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলবে হয়ে যাবে। চাইলে আপনি যদি বিশুদ্ধ মধু পান তার মধ্যে আধা চামচ বা এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে দেখবেন আপনার শরীর কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আরেকটা কথা বলে রাখি, যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুব বেশি, আলসার আছে তারা সকালবেলা লেবু, মধু, গরম পানি খেতে যাবেন না, এক্ষেত্রে কিন্তু সকালে এগুলা খাওয়ার পরে আপনার অস্বস্তি অনুভব হবে। যেমন অনেকে বলেন, আমার লেবু-মধু পানি সকালে সহ্য হয় না; এর মূল কারণ হচ্ছে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে। সেই ক্ষেত্রে আপনি এই খাবারটা দুপুরের খাবারের আধঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পরে খাবেন সমস্যা হবেনা উপকার কিন্তু পাবেন। এরপরও যদি আপনি দেখেন এসিডিটি হচ্ছে তাহলে অ্যালোভেরা জুস ব্যবহার করতে পারেন, অ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন অথবা অ্যালোভেরা জুসের যদি আপনার সমস্যা হয় যেমন কিডনি রোগীদের অ্যালোভেরা জুস খাওয়ার সম্পূর্ণ নিষেধ সেইক্ষেত্রে আপনি ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনি আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। এগুলো কিন্তু আপনার ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনি সকালে খালি পেটে দুই থেকে পাঁচ টা কাঠ বাদাম খেতে পারেন এটা ত্বকের জন্য বেশ ভালো। আপনারা সালাত খেতে পারেন পর্যন্ত আপনারা দুপুরে ভাত বা মাংস এইগুলোর মধ্যে ভাতটা এটকটু কমিয়ে দিবেন মাংসটা পরিমাণ মত খাবেন। পেট ভরানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে সালাদ খাবেন। সালাদের ক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখি, শসা, গাজর, টমেটো সব এক করে ফেলবেন না। যেমন টমেটো ও শসাটা এক করাটা ঠিক না, যেদিন সালাদে টমেটো রাখবেন সেদিন শসা সরিয়ে ফেলবেন যেদিন শসা রাখবেন সেদিন টমেটো সরিয়ে ফেলবেন। এর কারণ টমেটো ও শসা একসাথে খাওয়াতে কিছু পরিমাণে গ্যাস্টিক আপনার পেটে বেড়ে যেতে পারে কারণ এই দুটো খাবারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় যদি একসাথে খেলে ফেলেন। কিন্তু আলাদা আলাদা গ্যাপ দিয়ে যদি খান যেমন ধরেন এক ঘন্টা পরে টমেটো খেলেন বা এক ঘন্টা পরে আপনি শসা খেলেন এভাবে খেলে কিন্তু এই খাবার গুলা আপনার ক্ষতি করবেনা। এর পরে বিভিন্ন সবুজ শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত ফলমূল আপনারা খেতে পারেন আঙ্গুর, কমলা, পেঁপে এই খাবার গুলো কিন্তু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
আরেকটা কথা বলি, যদি মনে না থাকে কোন ফ্রুটসটা খাওয়া দরকার তাহলে একটা ফ্রুটসের নাম মনে রাখুন সেটা হচ্ছে কমলা অথবা মালটা। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ দুটি কমলা বা দুটি মালটা আপনি নিয়মিত খান, ছয়মাস কন্টিনিউ করুন দেখবেন আপনার চেহারার উজ্জলতা অনেক বেড়ে গিয়েছে কারণ ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এটাও কিন্তু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এর জন্য আমি বলবো মুরগির মাংস, গরুর মাংস কমিয়ে দিয়ে মাছ খাওয়া বাড়িয়ে দেন। দেশীয় মাছ খাবেন ফার্মের মাছ কম খাবেন আপনারা শিং মাছ খেতে পারেন, পাবদা মাছ খেতে পারেন এই মাছ গুলো তুলনামূলক পাঙ্গাস বা তেলাপিয়া থেকে অনেক ভালো। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সাধারণত যে উপকারটা ত্বকের করে সেটা হচ্ছে সূর্যের ক্ষতিকর যেই রশ্মি টা আছে সেটা যেন আমাদের ত্বকের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এই জায়গায় এই প্রটেকশনটা তৈরি করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। আপনার চেহারার সজীবতাটাকে রক্ষা করে, সূর্যের আলো আপনার চেহারার কোন ক্ষতি করতে পারবে না যদি ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড আপনার শরীরে পর্যাপ্ত থাকে। এছাড়াও আপনারা কাঠ বাদাম খাবেন এটাতেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আছে, ইলিশ মাছ খেতে পারেন দাম বেশি হলেও ইলিশ মাছ তাজা তাজা যদি খেতে পারেন এবং গরুর মাংস পরিমাণ মত খেতে পারেন এগুলো থেকেও কিন্তু কিছু পরিমাণে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তবে পরিমাণে বেশি নয়। আর আমি আগেই বলেছি সকালের নাস্তা নজর দিতে হবে। এছাড়াও জিংকের অভাব হলেও কিন্তু আমাদের ত্বকে ভাঁজ পড়ে যায়। দৈনন্দিন আমাদের খাদ্য তালিকায় জিঙ্ক রাখতে হবে লাল মাংস, ডিম, দুধ, পেয়ারা এইসব খাবারের মধ্যে জিঙ্ক থাকে। তবে মনে রাখতে হবে এগুলোর আবার অন্যদিকে ক্ষতিকারক চর্বির পরিমাণ বেশি সেক্ষেত্রে এইটা পরিমিত খেতে পারেন। আর তেল ছাড়া যেহেতু জীবন চলবেনা সেইক্ষেত্রে সামর্থ্যের মধ্যে যেই তেলটা সবচেয়ে ভালো সেটা খাবেন। যেমন আপনি যদি অলিবয়েল খেতে না পারেন কোকোনাট অয়েল খাবেন যদি কোকোনাট অয়েল এর দাম বেশি মনে হয় তাহলে স্বল্পমূল্যে কোন তেলটা ভালো সেইক্ষেত্রে আমি চোখ বন্ধ করে একটা তেলের কথায় বলব সেটা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল। আপনি এটা খেতে পারেন এটার দাম কিন্তু সয়াবিন তেলের মতই অনেক ভালো স্বাস্থ্যের জন্য। এটলিস্ট যারা নারিকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল তেল কিনতে পারবেন না তারা এই তেলটা প্রত্যেকটা খাবারে রাখতে পারেন। এটা সয়াবিন তেলের মত অন্যান্য ক্ষতি করবেন আপনার কিডনিরও কোন ক্ষতি করবেন। এরপর আপনারা গ্রিন টি খাবেন গ্রিন টি আপনার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বাড়িয়ে দিয়ে ত্বকের সজীবতা কে রক্ষা করে তাই গ্রিন টি খাবেন। যে কথাগুলো বললাম ইনশাল্লাহ যদি খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন, স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন, নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে। নিয়ম গুলো দুই মাস পালন করলে বুঝতে পারবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন