ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, dengue fever disease and treatment

ডেঙ্গুকে যদি শুধুমাত্র ভাইরাল রোগ ভেবে বসে থাকি তহলে হবে না। ডেঙ্গু তুলনামূলকভাবে একটু ভয়ংকর জ্বর। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো প্রকাশ পেলেও আপনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কিনা তা বোঝা একটু কঠিন। ডেঙ্গু একটি  ভাইরাসঘটিত রোগ। সাধারণত গ্রীষ্ম প্রধান দেশে এগুলো দেখা মিলে। এটি সংক্রমনের হার বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।

প্রিয় পাঠক, এটুজেড টেক বিডিতে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আশা করি আপনারা সবাই ভালোই আছেন। আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে ডেঙ্গু রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

আরও পড়ুন:

পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা

খুশখুশে কাশির সিরাপ ও কাশি দূর করার উপায়

কলমি শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

থাইরয়েড কি খেলে ভালো হয়

শীতে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ

ডেঙ্গ জ্বরের কারণ জানার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন যে, এডিস মশা কামড় দিলেই কি ডেঙ্গ হয় কিনা। স্বাভাবিকভাবে উত্তর হবে না। তবে ডাক্তারগণ গবেষণা করে বলেছেন যে, পরিবেশের কোনো ভাইরাস যদি এডিস মশার মধ্যে বিস্তার করে এবং ঐ মশা যদি কাউকে কামড়ায় তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্ত্রী এডিস মশা সাধারণত ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে। আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে সুস্থ্য ব্যাক্তিতে এই মশা ভাইরাস ছাড়াতে থাকে। হালকা ডেঙ্গু জ্বরের কারণে অনেক বেশি জ্বরের দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়ে থাকে। তবে ইতিপূর্বে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত্র হয়েছেন তাদের যদি আবার ডেঙ্গু দেখা দেয় তাহলে প্রাণঘাতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাস রয়েছে এমন মশা কামড় দিলে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সবার জেনে থাকা ভালো। সাধারণত ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো হলো:

  • উচ্চ জ্বর (40°C/104°F) 
  • তীব্র মাথার যন্ত্রণা 
  • চোখের পিছনে ব্যথা
  • মাংসপেশিতে ব্যথা
  • অস্থি সন্ধি (bone) তে যন্ত্রণা
  • চামড়ায় লালচে দাগ
  • ক্ষুদা কমে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বমিভাব 
  • মাথাঘোরা 
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া 
  • ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি
  • দেহে শীতলতা অনুভব করা

এই উপসর্গ গুলো ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। ২য়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে এই রোগের ভয়াবহতা বেড়ে যায়। ডেঙ্গুর যেই উপসর্গগুলো বেশি ভয়াবহতা হয় তা হলো:

  • প্রচণ্ড পেট ব্যথা 
  • বিরক্তি এবং অস্থিরতা
  • দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস 
  • মারি বা নাক থেকে রক্তপাত 
  • অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা 
  • ক্লান্তি
  • ক্রমাগত বমি হওয়া 
  • প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত 
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ 

ডেঙ্গুর ভাইরাস মানবদেহের রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকে। এতে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়। এতে শরীরে শক লাগে, বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বের হওয়া, বিশেষ অঙ্গের ক্ষতি এমনকি শেষ মুহুর্তে রোগি মারা যেতে পারে। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গুে রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে এতক্ষন আপনারা অনেক কিছু জানতে পারলেন এখন আসুন জেনে নেই। ডেঙ্গু রোগের জন্য বিশেষ কোনো ঔষুধ এখনও আবিস্কার করা হয়নি। এগুলো ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে কমে যায়। চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষুধ দিয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা করে থাকে। 

রোগের মাত্রা বেশি হলে রোগিকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তারদের নিকট চিকিৎসাধীন রাখতে হবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগিদের একধরণের ইলেক্ট্রোলাইট তরল দেওয়া হয়। এতে দেহে প্রয়োজনীয়  পানি ও লবণ জোগান হয়।

ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

  • ডেঙ্গু যেহেতু মশার কামড় থেকে হয়ে থাকে। তাই মশা যাতে কমড়াতে না পারে সেজন্য পরিবেশের যত্ন নিন এবং নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচান।
  • বাড়ির চারপাশে পানি যেন না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আশে পাশে ময়লা-আবর্জনা ও নদ্রমার পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন এবং সময়মত সেই স্থান পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করুন।
  • গাছের টব, ফুলদানি, বেলকুনি, বান্দারায় কোনায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • শরীর ঢেকে থাকে এমন জামাকাপড় পড়ুন। মোজা, জুতা পরুন, হাত পা ঢাকা থাকে এমন জামা পড়ুন।
  • মশারী ব্যবহার করুন। এবং মশারীর ভিতরে যেন মশা না থাকে সেটাও লক্ষ্য রাখবেন।
  • মশা নিরোধক কেমিকেল ব্যবহার করতে পারেন
  • কয়েল ব্যবহার যদিও ক্ষতিকর, তবে নিয়ম অনুযায়ী ২০ মিনিটের জন্য কয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

বেশ কিছু পুষ্টি উপদান সমৃদ্ধ খাবার আছে যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য বেশ উপকারি। 

  • ভিটামিন সি, সাইট্রাস ফল, ও শাক সবজি
  • জিঙ্ক, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটিতে পাওয়া যায়
  • আয়রন, মাংস, মটরশুটিতে রয়েছে
  • ওটমিল
  • পেঁপে
  • নারকেলের পানি
  • নরমাল পানি

ডেঙ্গু হলে যা খাওয়া যাবে না

ডেঙ্গু হলে হজম হয়না এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এগুলো হজমে সমস্যা করে এবং ডেঙ্গুর প্রতিকার হতে সময় লাগে।

  • আমিষ খাদ্য
  • চর্বিযুক্ত খাদ্য
  • তৈলাক্ত খাদ্য
  • ভাজাপুরি

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার

ডেঙ্গু হলে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। ডেঙ্গুর প্রতিকারে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তার কিছু বিষয় নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হলো। সর্বপরি ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।

  • জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতিয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে
  • ৬-৮ ঘন্টা পর পর এই ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে হবে জ্বরের মাত্রার উপর ভিত্তি করে
  • প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি ৪ টি ঔষধ নিতে পারবে ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী এর বেশি নিলে লিভারের সমস্যা হতে পারে।
  • অ্যাসপিরিন অথবা এনএসএআইডি গ্রুপের ঔষধগুলো ব্যবহার করবেন না।
  • জ্বর কমিয়ে আনার জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজানোর মাধ্যমে শরীর মুছা যাবে এবং নিয়মিত গোসল করতে হবে
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রচুর পরিমানে বিশ্রাম নিতে হবে
  • লক্ষণ দেখা দিলে ভারি কাজ বা বেশি পরিশ্রম করা যাবে না আবার শুয়ে বসে থাকাও যাবে না। স্বাভাবিক হাটাহাটি করবে।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণ দিলে বাড়ির বাহিরে বের হওয়া উচিত না। এই সময় বাড়িতে অবস্থান করবে
  •  আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • পানি, স্যুপ, স্যালানি, ফলের রস, দুধ ইত্যাদি জাতীয় নরম পানীয় খেতে হবে।
  • পানিশূন্যতায় ভোগানো যাবে না। প্রতিদিন ২.৫-৩ লিটার পানি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ?

না। ভাইরাস আক্রান্ত ডেঙ্গু/এডিস মশার কামরে ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫-৬ দিন থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে

হ্যা, ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে

ডেঙ্গু টেস্ট কি কি

  • ডেঙ্গু এনএস১ এন্টিজেন, 
  • অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, 
  • সিবিসি (প্লাটিলেট কাউন্টসহ)

ডেঙ্গু মশা কখন কামড়ায়

একসময় বলা হতো দিনের বেলা কামড়ায়। ডেঙ্গু মশা দিনে রাতে যে কোনো সময় কামড়াতে পারে।
পরিশেষে

ডেঙ্গুকে সাধারণ রোগ ভেবে ঘরে বসে থাকলে হবে না। এটি অনেকটা মরণব্যাধি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে আপনাকে তাই সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা ও ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। 

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে বা কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। সকলে সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

source: Doctime, ckbirlahospitals

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অনার্স প্রথম বর্ষ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর ২০১৮ | Hon's 1st year previous year question with answer 2018

অনার্স প্রথম বর্ষ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর ২০১৯ | Hon's 1st year previous year question with answer 2019

অনার্স প্রথম বর্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর ২০২০ | Hon's 1st year previous year question with answer 2020